সাংবাদিকতায় এতো সর্বনাশ হলো কবে? সাংবাদিকদের একটি অংশ এখনও সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন না। প্রযুক্তির কল্যাণে আগের মতো গভীর রাত অবধি রিপোর্টারদের কাজ করতে হয় না। বিশেষ ঘটনা ছাড়া। তবুও রাত করে ঘুমান।
রিপোর্টারদের অনেকে অ্যাসাইনমেন্টে যেতে চান না। অনেকে দেরি করে যান। অনেকে এর ওর সহযোগিতা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের ওপর প্রতিবেদন করেন। নিজে যানই না। রিপোর্টাদের একটা অংশ নিজের চেনা-জানা সম্পর্কের গণ্ডির মধ্যেই চলাফেরা করেন, কাজের ক্ষেত্রে নতুন নতুন সোর্স তৈরি করার উৎসাহ নেই।
কোনো কোনো রিপোর্টার নিজের পরিচিত ও অভ্যস্ত/আরামের পথের বাইরে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দিলেই নানান বাহানা, ছুতা-নাতা দেখিয়ে এই অ্যাসাইনমেন্ট এড়িয়ে যাওয়ারই চেষ্টা করেন। বাধ্য করা হলে অধিকাংশ সময় দায়সারা ও দুর্বল প্রতিবেদন জমা দেন।
রোস্টার করে ডে অথবা নাইট ডিউটির ব্যাপারেও রয়েছে অনেক রিপোর্টারের অনীহা।
নিজে একটা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেই বিষয় নিয়ে পরবর্তী ডেভেলপমেন্টস বিষয়ে ধারাবাহিক ও অব্যাহত খোঁজ খবর রাখা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফলোআপ প্রতিবেদন তৈরি করার ব্যাপারে আশা করা দুরূহ। এমন কি মনে করিয়ে দিলেও যথাযথ কর্ম উৎসাহ বা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায় না।
সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে যাদের চাকরির দৈর্ঘ্য যত বেশি, তাদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার প্রমাণ তেমন কিছুই পাওয়া যায় না।
একটা সংবাদ প্রতিষ্ঠানে দু’চার জন এমন সিনিয়র অভিজ্ঞ ও দক্ষ সাংবাদিক প্রয়োজন যারা দিনের যে কোনো সময়ে, ঘণ্টায় ঘণ্টায়, সারাদেশে, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শীর্ষ ২০টি সংবাদ সম্পর্কে সজাগ, আপ টু ডেট, অবহিত ও সক্রিয় থাকবেন। এমন দায়িত্বশীল সাংবাদিক আছেন কেউ?
ভাষায় দক্ষতা আজকাল তেমন আশাই করা হয় না। কিন্তু লেখার ন্যূনতম সামর্থ এতো দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে কবে থেকে?
একটি রিপোর্ট তৈরি করতে তিন বা ততোধিক সূত্রের সাথে মাল্টিপল সোর্সের কথা বলা বা তিন বা ততোধিক সংবাদ উৎস থেকে খবরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টস সংগ্রহ করা, অনেক কঠিন কাজ ভাবা হয় কেনো?
একটি প্রতিবেদন রচনায় যে কোনো সংবাদ উৎস থেকেই নির্ভরযোগ্য তথ্য, উপাত্ত, বক্তব্য গ্রহণ করা উচিত। এভাবে যত বেশি অনুসন্ধান করা হবে, যত বেশি উৎস থেকে তথ্য উপাত্ত গ্রহণ করা হবে, প্রতিবেদন ততো বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হবে। কিন্তু আমরা আলসেমি করি কেন?
আমাদের প্রতিবেদকরা বিভিন্ন সময় অন্যের প্রতিবেদন থেকে চুরি করে কখনো সম্পূর্ণটাই হুবহু লিখে নিজ প্রতিষ্ঠানে রিপোর্ট জমা দেন। এ রকম নির্লজ্জ এবং ঘৃণ্য চৌর্যবৃত্তি এতো বেড়েছে কেনো?
কোনো প্রতিবেদক যে কোনো উৎস থেকে ছোট্ট একটি তথ্য নিলেও তার ক্রেডিট মূল সোর্সকে কেন দেবেন না। ক্রেডিট না দিলে এটা চুরি। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সাংবাদিকদের এখন এতো সংগঠন, অনেক বেশি মোহনীয় আর্কষণ তৈরি করেছে। সারা বছর জুড়ে একের পর এক সংগঠনের নির্বাচন। নানান উৎসব আয়োজন, এর ফলে কী নিজের সাংবাদিকতার কাজটুকু সাংগঠনিক আয়োজনের কাছে গৌণ হয়ে যাচ্ছে?
বাংলাদেশে একজন যথার্থ চীফ রিপোর্টার এতো দুর্লভ কেনো? দিনের গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টস এবং সময়পোযোগী বিশেষ প্রতিবেদনের জন্যে যথাযথ ব্রিফ করে, গাইড করে, সময় সময় সোর্স চিনিয়ে দিয়ে রিপোর্টিংয়ের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার দক্ষতা ও যোগ্যতার চীফ রিপোর্টার এখন কোথায়?
সিনিয়র এডিটরবৃন্দ প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন সংবাদপত্র পর্যালোচনা করে নিজের পত্রিকার দুর্বলতা/সবলতা খুঁজে বের করবেন এটা কেন বলতে হবে?
সিনিয়র এডিটরবৃন্দ যে কোন ‘বিশেষ দিন’ নিয়ে যথেষ্ট সময় হাতে রেখে, বেশ আগেই কেন কনটেন্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন না? কেন জাস্ট আগের দিন, বিশেষ দিনের কথা স্মরণে আসবে?
সাংবাদিকরা শিফট কিংবা ঘণ্টা বেধে কাজ করেন? কবে থেকে?
সংবাদপত্রের শীর্ষ সম্পাদকরা খোঁজ রাখেন না তার কোন সহকর্মী কী করছেন, কে করছেন, কে করছেন না। কোনো তদারকী নেই। কে কেমন আছেন, কার কী যন্ত্রণা, অভাব, অভিযোগ খোঁজ রাখেন না, কোনো মানবিক সম্পর্ক নেই। এমন কেন নেতৃত্ব?
কোনো শিফট ফাঁকা হয়ে গেছে, সিনিয়র সম্পাদকদের উদ্বেগ নেই। কর্মী ধরে রাখার ও দক্ষ করে তোলার আন্তরিক প্রয়াস নেই। পদ শূন্য হলে, পূরণের উদ্যোগ নেই। এ কেমন উদাসীন নেতৃত্ব?
লেখক:
নাঈমুল ইসলাম খান
সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়