নুরুন্নবী নুর: কিছু মানুষ চলে যান না, চলে গিয়ে ফিরে আসেন। কিছু মানুষের জন্ম যেমন আনন্দের, মৃত্যুটাও তেমনি সমান আনন্দের। মানুষটির বর্ণাঢ্য শিল্পী জীবনের ইতি হয়েছে ঠিকই, তবে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন সারাজীবন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হয় তো গত হয়েছেন, সত্যজিতের অপু কোন দিনই আমাদের ছেড়ে যাবেন না।
পুরোদস্তুর একজন আগোগোড়া অভিনেতা। অভিনয় শিল্পটাকে আয়ত্ব করেছিলেন, স্তানিস্লাভস্কি ঢঙে। ছিয়াশি বছরে যা কাজ করেছেন, তা অনেক। জেনে শেষ করা যাবে না। একজন নানামুখী প্রতিভা সম্পন্ন মানুষকে চিরদিনের জন্য হারিয়েছি। বয়স হলেও মানুষটির প্রয়োজনীয়তা কখনো শেষ হবে না।
তাঁদের কীর্তি এ যুগে কম স্বীকৃতি পেয়েছে, তবে হা- হুতাশ করে জীবন পার করে দেননি। কর্মটাকে বড় করে দেখেছেন। শিল্পকে দু’হাত ভরে সমৃদ্ধ করে দিয়ে গেছেন। মানুষটির কাছে ভারতীয় সংস্কৃতি আজীবন ঋণী থাকবে। তিনি হাত তালি পাওয়া শিল্প চর্চা করেননি, করেছেন অমর হয়ে থাকার মতোন কালজয়ী কাজ।
চারিদিকে লোকের অভাব নেই, ম্যাচুয়ুড ও ইমেচ্যুড, বয়স্ক ও কম বয়স্ক; তবে এ সব মানুষের অভাব সারা জীবনই থাকবে। যেমন কালের স্রোতে আমরা আর ঋত্বিকদা পাইনি, পাইনি সত্যবাবু। শুধু পেয়েছি, কিছু ভাঁড়ামো লোক।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমার কাছে অন্য মানের মানুষ। আমি, তাঁকে লোক বলি না। লোকের ভীড়ের থেকে বের হয়ে আসা আপাদমস্তক একজন শিল্পী মানুষ। তাঁর অনেকগুলো কাজ দেখেছি। সেখান থেকে শিখেছি অনেক। জেনেছি প্রচুর।
তিনি জীবনটাকে অন্যভাবে ভাবার জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলেন। ভাবনার জায়গায় যে কেউ পরিবর্তন ঘটাতে পারেন না, মানুষটি সব সময় সে জায়গায় বিচরণ করতেন। নতুন করে বাঁচার উদ্দীপনা তৈরি করতেন। সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করার রসদ যোগাতেন। হয় তো সরাসরি দেখিনি, তবে তাঁর কাজগুলো আমার কাছে অন্য মানে তৈরি করে, করত।
ওপারে ভালো থাকবেন প্রিয় অভিনেতা। একজন অভিভাবক হারালাম। হারালাম একজন শিল্পী মানুষ।