মোস্তফা কামাল যাত্রা: সৃজনশীল কলাকৌশলের অভিব্যক্তিধর্মী প্রকাশের মধ্য দিয়ে মানব মনের নান দিককে বিশ্লেষণাত্বক দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপনের কলা বিজ্ঞান ‘এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপি’র গণ প্রয়োগ সুনিশ্চিতকরণের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অগ্রণী ভূমিকা সময়ের দাবি।
করোনার কারণে শিল্পাঙ্গনের সাথে সংশ্লিষ্টদের অনুশীলন ও প্রদর্শনী বন্ধ থাকায় যারা পেশাগতভাবে এ শিল্পকর্মে যুক্ত থেকে তাদের জীবন ও জীবনাচার পরিচালনা করে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এ অবস্থায় তাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা উত্তরণে যদি তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মনোবিশ্লেষক শিল্পযজ্ঞধর্মী সাইকোথেরাপি প্রয়োগে দক্ষ জনবল হিসাবে গড়ে তোলা হয়; তবে তাদের আর্থিক সমৃদ্ধি পুরণ করা সম্ভব। অর্থাৎ, যদি স্ব স্ব ক্ষেত্রের শিল্পীদের সৃজনশীলতাকে উপজীব্য করে তাদের থিয়েটার থেরাপিষ্ট, আর্ট থেরাপিষ্ট, মাইম থেরাপিষ্ট, মিউজিক থেরাপিস্ট, ডান্স থেরাপিষ্ট, সেডো থেরাপিষ্ট, ক্লাউন থেরাপিস্ট হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রশিক্ষণের আয়োজন করে, তবে তা একটি যুগোপযোগী ও কাযকর সিদ্ধান্ত হিসাবে বিবেচিত হবে। তা হলে প্রশিক্ষিত প্রগ্রেসিভ সাইকোথেরাপিষ্টগন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্ষতিগ্রস্থদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পেশাদারীভাবে কাজ করতে সমর্থ হবেন। যা তাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা উত্তরণের পাশাপাশি সৃজনশীল কলামাধ্যমের বিকল্প পদ্ধতিতে চর্চা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। স্বরণীয় যে, মহামারী করোনার কারণে সর্বশ্রেণি ও পেশার মানুষ কোন না কোনভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্থ এবং প্রত্যহিক কাজে সতস্ফূর্তভাবে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
অপর দিকে, যথাযথ সময়ে মনোবৈজ্ঞানিক সেবা না পাওয়ায় স্থায়ীভাবে মানসিক রোগীতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। যদি বিকল্পভাবে সৃজনশীল কলার মনোবৈজ্ঞানিক প্রয়োগ, শিল্পীদের দ্বারা করা যায়- তবে সাপও মরবে; লাঠিও ভাঙ্গবে না। অর্থাৎ দেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা যেমন নিশ্চিত হবে; তেমনি শিল্পী সমাজও সুযোগ পাবে শিল্পের মাধ্যমে জীবিকায়নের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে। অতিমারী করোনার দীর্ঘ মেয়াদী ও সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী বর্ণিত প্রস্তাবনাটি আগামী অর্থ বছরের পরিচালনার উদ্যোগ নেবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
শিল্পকর্মের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার মানবিক এ বিবেচনা বাস্তবায়ন উভয়মুখী ইতিবাচক ফলাফল সৃষ্টিতে সহায়ক একটি কর্ম উদ্যোগ। তাই ওই প্রস্তাবনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এগিয়ে আসবে এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে প্রশিক্ষিত এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপিষ্ট গড়ে তুলে তাদের তত্বাবধানে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মনোস্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে বলে একজন মনোবিশ্লেষক শিল্পযজ্ঞ অনুশীলক হিসাবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
জয় হোক শিল্পের মানবিক প্রয়োগ ক্ষেত্রের; আর নিশ্চিত হোক শিল্পীদের জীবন ও জীবিকায়ন। প্রান্তিক পযায়ের শিল্পীদের অনুশীলন ও আর্থিক নিশ্চয়তা সু-নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ প্রস্তাবনার সঠিক ও ফলপ্রসু বাস্তবায়ন; কাযকর ও দীর্ঘ মেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিতে প্রভাবক ও প্রণোদনামুলক শিল্পশৈলী হিসাবে কর্তৃপক্ষের মনোযোগ পাওয়া উচিৎ। শিল্পের মানবিক ব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রকে প্রশস্থ করতে এটি একটি ঐতিহাসিক শিল্প উদ্যোগের মর্যাদা পাবে। ‘আর্ট এগেইনস্ট করোনা’ শীষক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিল্পের চর্চা ও প্রদর্শনের যে দ্বার উন্মোচিত হয়েছে- তাকে আরো প্রশস্থ করতে করোনাকালে শিল্পের মাধ্যমে শিল্পীর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে প্রস্তাবিত কর্মসূচী অতি গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: অভিব্যক্তিধর্মী মনোবিশ্লেষক শিল্প অনুশীলক ও নির্বাহি পরিচালক, উৎস