১৭ এপ্রিল শ্রমিকেরা কাজে না গিয়ে প্রকল্প প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকে। পরবর্তী পুলিশের পরামর্শে শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করার জন্য পাঁচজন প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক নির্বাচিত পাঁচজন প্রতিনিধি কর্তৃপক্ষের নিকট শ্রমিকদের প্রস্তাবিত দশ দফা দাবি উত্থাপন করলে তারা কোন দাবিই আমলে নেয়নি। বরং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী ওই পাঁচজন শ্রমিক প্রতিনিধিদের পরিস্কার বলে দেয়া হয়, ‘কোন দাবি মেনে নেয়া হবে না’ এবং উল্টো হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘দ্রুত কাজ শুরু না করলে পরের দিন থেকে শ্রমিক প্রতিনিধিদেরও চাকরি থাকবে না।’ এতে আলোচনা ভেঙ্গে যায়।
পাঁচজন শ্রমিক প্রতিনিধি আলোচনা থেকে বের হয়ে শ্রমিকদের বিস্তারিত অবহিত করলে শ্রমিকেরা আরো বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এবং তাদের মধ্যে কিছু উত্তেজিত শ্রমিক ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। স্বভাবতই আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ অবস্থায় পুলিশ প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। শ্রমিকেরা পিছু হটে। পরিস্থিতি শান্ত হলে শ্রমিকদের ভাষ্য মতে, পুলিশ আবার মাঠে নামে এবং রহস্যজনক কারণে পুলিশ নিজেরাই পুলিশের একটা মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পুলিশ সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে সরাসরি গুলি করতে থাকে।
পুলিশের সাথে অস্ত্রধারী কিছু মাস্তানও ছিল বলে অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। আহত এবং নিহত শ্রমিকদের গায়ে লাগা গুলির অবস্থান দেখে প্রতীয়মান হয় যে, পুলিশের ছোঁড়া সব গুলিই ছিল শ্রমিকদের বুক বরাবর অর্থাৎ এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, পুলিশ শ্রমিকদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেছিল। পুলিশের এমন নির্বিচার গুলিতে সাতজন শ্রমিক প্রাণ হারায়। যার মধ্যে চারজন ঘটনাস্থলে, একজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে এবং দুইজন ঘটনার তিন দিন পর চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। এদের মধ্যে একজন স্থানীয় এবং ছয়জন বহিরাগত।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শ্রমিক মোর্শেদের মতে, এখানে প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই শ্রমিক আহত বা নিহত হয় যা জন সমক্ষে আসে না।
(চলবে)