ঢাকামঙ্গলবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাওলানা শাহ্সুফি শেখ অছিয়র রহমান আল্-ফারুকী (ক.) স্মরণে

রনজিত কুমার শীল
জানুয়ারি ১৯, ২০২২ ১১:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রনজিত কুমার শীল: হযরত মাওলানা শাহ্সুফি শেখ অছিয়র রহমান আল্-ফারুকী (ক.) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ গ্রামে ১২৫৯ বাংলা ৭ মাঘ মোতাবেক ১৮৫২ ইংরেজী ২১ জানুয়ারী, ১২৭০ হিজরী বুধবার সকালে জন্ম নেন। তার পিতার নাম মৌলভী শেখ মোহাম্মদ মাজম ফারুকী ও মাতার নাম মোছাম্মৎ জয়নাব বিবি।

তার পিতা বর্ণনা করেন, পুত্রের জন্মের আগে তিনি এক রাতে তাহাজ্জুদের নামাজের পর অজিফা পাঠান্তে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েন ও স্বপ্নে দেখতে পান যে, তিনি আলমে মলকুতে ভ্রমণ করছিলেন বলে মনে হয়েছিল। হঠাৎ একটি অত্যুজ্জ্বল প্রদীপ তার দৃষ্টিগোচর হল। সেই প্রদীপটি অন্য আর একটি অত্যুজ্জ্বল জ্যোতির্ময় প্রদীপের সাথে মিশে এমন এক জ্যোতির্ময় রূপ ধারণ করল যে, যার আলোকে সমগ্র জগত আলোকিত হয়ে গেল। পরে তার পিতা জনৈক এক কামেল আলেমে দ্বীনের নিকট ও স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানলেন যে, তার ঔরসে একজন অলী উল্লাহ জন্ম নেবেন। তিনি গাউসুল আজমের শিষ্যত্ব গ্রহণ করতঃ গাউছিয়ত ও কুতুবিয়তের ফয়েজে এত্তেহাদী হাছেল করবেন।

এ স্বপ্ন-ব্যাখ্যা হযরত মাওলানা চরণদ্বীপির (ক.) জন্মের ভবিষ্যৎবাণী ছিল, যা সম্পূর্ণ সত্য হয়েছিল। আর একটি লক্ষণীয় বিষয় এ যে, হযরত মাওলানা শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকীর (ক.) জন্ম ১২৫৯ বাংলা ৭ মাঘ বুধবার আর তাঁর মোরশেদ হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (ক.) জন্ম ১২৩৩ বাংলা ১ মাঘ বুধবার অর্থাৎ জন্মের বাংলা মাস ও বারের দিক দিয়ে উভয়ের এক ও অভিন্ন। প্রতি বছর ৭ মাঘ হযরত মাওলানা শাহ্সুফি শেখ অছিয়র রহমান আল্-ফারুকীর (ক.) বার্ষিক ওরশ মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ৭ মাঘ ১৪২৮ বাংলা, ২১ জানুয়ারি শুক্রবার বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

আলীগড় জামেউল উলুম মাদ্রাসায় প্রভাষক থাকাকালীন ১২৯৮ হিজরী সনে হযরত মাওলানা শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকী (ক.) হযরত রসুলে করিম (দ.) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হন। হযরত রসূলে করিম (দ.) স্বপ্নযোগে তাকে নির্দেশ দেন- ‘তোমার জন্য আমি মনোরম ছুরত পাঠিয়েছি। শিগরিই গিয়ে আমার মাহবুব, মোজাদ্দেদে জমান গাউছে আযম বেলায়তে মোতলাকায়ে আহমদী যুগ প্রবর্তকের কর্মসূচী এখতেয়ার কর। তার প্রেম ভান্ডারের অমূল্য রত্ন আহরণ কর। ওটা তোমার জন্য উন্মুক্ত। তুমি তার বেলায়তে মোতলাকায়ে আহমদী অনুযায়ী ভ্রমান্ধ মানব গোষ্ঠিকে প্রেম প্রেরণায় জাগ্রত করে তোল, আধ্যাত্মিক নেয়ামত বিতরণ করতঃ তত্ত্বজ্ঞানের আলো দ্বারা উদ্ভাসিত করে তোল। তার প্রেম ভান্ডার তোমার হাতে সমর্পণ করলাম, (অর্থাৎ তোমার জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম) মাদ্রাসার শিক্ষকতা হতে তোমাকে রোখছত দিলাম। তুমি স্বদেশে চলে যাও’, (হযরত মাওলানা চরণদ্বীপির জীবনী ও কেরামত গ্রন্থ দ্র.)। এ শুভ স্বপ্ন দেখার পর তিনি মাদ্রাসা হতে বিদায় নিয়ে প্রথমতঃ কলিকাতা এসে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসার মোদারেছ কুতুবে জমান হযরত মাওলানা শাহ্সুফি ছফীউল্লাহ সাহেবের খেদমতে হাজির হয়ে স্বপ্ন বৃত্তান্ত খুলে বললেন, তার স্বপ্নের (তাবীর) ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আপনার স্বপ্ন সত্য। সত্যই মোবারক, এটা আপনার জন্য নবী করিম (দ.) কর্তৃক সংবাদ, এতে কোন সংশয় নেই।

হযরত রছুলে করিম (দ.) মনোরম ছুরত আকৃতি ও প্রকৃতি অবয়বতার সাদৃশ্য প্রতীক চট্টগ্রাম জিলার মাইজভান্ডার গ্রামের হযরত মাওলানা শাহ্সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) ছাড়া অন্য কেউ নেই। মাহবুবে ছোবহানী পীরানে পীর দস্তগীর গাউসুল আযম মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানীর (ক.) সম শ্রেণির অলী উল্লাহ তিনিই। তার আকৃতি ও প্রকৃতির সাদৃশ্য আপনার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। স্বদেশে চলে যাওয়ার নির্দেশের অর্থ এটাই হবে যে, তিনি আপনার অপেক্ষায় আছেন। আপনি শিগগিরই তার খেদমতে হাজির হন। তিনিই বেলায়তে মোতলাকায়ে আহমদীর যুগ প্রবর্তক হাদী। আপনি তার প্রথম খলিফা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবেন। অতঃপর তিনি ১২৯৮ হিজরী সনে স্বদেশের স্বগ্রামে নিজ বাড়ীতে আসেন।

লেখক: সাংবাদিক, সদস্য-চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিইউজে

Facebook Comments Box