আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের বড় কোন স্বপ্ন থাকতে নেই। বড় কোন স্বপ্ন দেখতে নেই। এমনকি কারো অনুপ্রেরণা পাওয়ারও অধিকার নেই। আমাদের জন্মটাই একটা দুর্ঘটনা। একটা বড় ধরনের আকাল, দুর্যোগ।
যতই যোগ্যতার চাদরে মোড়াই থাকি না কেন, নিজেকে উপস্থাপন করার শত সুযোগ থাকলেও অশুভ শক্তির কাছে মুখ থোবড়ে পড়ে থাকা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। বর্তমানে শিক্ষিত হয়ে উঠাটাই আমাদের মূল প্রাপ্তি আর চাওয়াটা একটা অভিশাপ।
এতো স্বপ্ন দেখে কি হবে? যখন কাছের মানুষগুলোর কাছে একটা বড় ধরনের বোঝা, সেখানে অন্যের কাছে ঠাঁই খোঁজা তো নেহাত ছেচড়ামি।
দাউদ হায়দার বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্মটাই একটা আজম্ম পাপ।’ সবার ক্ষেত্রে কথাটা প্রযোজ্য না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের ক্ষেত্রে কথাটা একটু ভাবতে হয়।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের দৈনন্দিন জীবনটা অনেক কঠিন। রাতে ঘুমানোর আগে ভাবতে হয় দিনে কি করব। কিভাবে চলব, অনেক হিসেব নিকেশ। যেখানে হিসাবের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে। ভাবতে হচ্ছে, এভাবে কি চলা যায়।
কাউকে ভাল লাগলেও অভাবের তাড়নায়, মনের ভাবটাও সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না।প্রকাশ করতে গেলেই যে অনেক কিছুর প্রয়োজন। যেটার যোগান দিতে গেলেই অন্যের কাছে ছোট হতে হয় বারবার। মেনে নিতে হয় অন্যের বড় বড় কথা।
বরাবরের মতই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের যোগ্যতা প্রকাশের একমাত্র হাতিয়ার ভাষা, মুখের ভাষা। মুখে কথা বলেই মূলত রক্তের সম্পর্ক থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিকা অব্দি মন রক্ষা করে চলতে হয়।
অনেক পরিবারে তো সে সব ছেলেদের বলেই দেয়, মিঠা কথায় চিড়া ভিজে না। চিড়া ভিজাতে হলে বুঝতেই পারছেন, কি প্রয়োজন। সবখানে প্রয়োজনটাই বড়, সম্পর্কটা আনুষ্ঠানিকতা।
সে সব ছেলেদের স্বপ্নও একটু বেশি থাকে। আপন মানুষগুলোর কাছে নিজেকে উজাড় করে প্রকাশ করতে মরিয়া হয়ে উঠে সব সময়। তখন পাগল হয়ে যায়। ভেবে উঠতে পারে না, কি করবে!
এমনকি একান্ত মানুষগুলোর কাছে শত প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও মন ভোলানো কথা জানলেও কিছু একটা সময় বিশেষে বিশেষ কিছু দিতেই হয়, যেটা সেটা না থাকলে মোটেও পূরণযোগ্য নয়। তখন দিতে না পারলে নিজেকে খুব নিচু মনে হয়।
এভাবে বেঁচে থাকাটা সত্যিই মাতলামি। মাতলামি করে বেঁচে থাকার চাইতে জন্ম না হওয়াটাই ভালো ছিল। এখানে কেউ কাউকে বুঝে না, বুঝতে চাইও না। এখানে প্রতিটা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে সেটাকে ঘিরে, যেটা না থাকলে যে কারো কাছে আপনি আপন হয়েও পর!
দিন শেষে সৃষ্টিকর্তার কাছে এমন একজন মানুষকে প্রার্থনা করি, যে মানুষটি নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসবে। নিঃস্বার্থভাবে আগলে রাখবে ভালবাসার চাদরে।
লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়