চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলা শাখা।
বুধবার (১৪ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড মো. আব্দুল নবী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে একটি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার পর ইতোমধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এর ফলে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবির পাহার-টিলা ও শতবর্ষী বৃক্ষগুলো ধ্বংসের হুমকির মুখে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং গণমাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন চট্টগ্রামের আপামর নাগরিকরা। এর আগে যখন হাসপাতাল নির্মাণের কথা উঠেছিল, তখনই চট্টগ্রামের পেশাজীবীরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু কারো আপত্তি-মতামতের তোয়াক্কা না করে সরকার কর্তৃত্ববাদী সিদ্ধান্তে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ, উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় সরকারকে এ মারাত্মক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘তথাকথিত উন্নয়ন আর মুনাফালোভী চক্রের খপ্পরে পড়ে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় সব সবজু উদ্যান, উন্মুক্ত স্থান এখন ইট-পাথরের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। বলতে গেলে, সিআরবি একমাত্র শেষ সবুজ উদ্যান; যেখানে শহরের মানুষ গিয়ে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়। অথচ সেই উন্মুক্ত স্থানটিকেও ধ্বংসের খেলায় মেতেছে সরকার। এ সিআরবির শিরিষতলায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, বলিখেলাসহ নানা ধরনের আয়োজন হয়। সেখানে হাসপাতালের মত একটি স্থাপনা হলে এসব আয়োজন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। চট্টগ্রামবাসী এ চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অতীতে চট্টগ্রামে তাদের মালিকানায় থাকা অনেক বড় বড় জায়গা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিয়েছে। কিন্তু এসব জায়গায় গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক স্থাপনা থেকে চট্টগ্রামের আপামর মানুষ কোন সুবিধা পায়নি, শুধুমাত্র বিত্তবানদের লাভ হয়েছে। রেলের অনেক জায়গা বিত্তবান-ক্ষমতাশালীদের দখলে আছে। সে সব জায়গা উদ্ধারে তাদের কোন তৎপরতা নেই। অথচ সিআরবি উন্মুক্ত স্থানটিকে ধ্বংস করে দিতে তারা তৎপর।’
বিবৃৃৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সরকার উন্নয়নের নামে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা সরকারি কাজের ক্ষেত্রে জনমতের কোন তোয়াক্কা করছে না। জনমানুষকে সুবিধা দেওয়ার পরিবর্তে তাদের মধ্যে মুনাফালোভী ও উন্নয়নের ফাঁকা বুলি ছেড়ে সস্তা জনপ্রিয়তায় মেতে ওঠার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ভোটের সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সরকার জনমতকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া। আমরা সরকারের এ অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আপামর জনতাকে এক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধ করা না হলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবে।’