ঢাকা: আবারো দুঃসংবাদ দিলো তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বিশ্বে বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের নজিরবিহীন দরপতন, খুচরা বিক্রি ও চাহিদায় ধ্বস এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে মন্দার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ এর সভাপতি ড. রুবানা হক।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) বিকাল পাঁচটায় অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ মন্দ খবরটি জানান।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে মন্দার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ হ্রাস পায়। গত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে রপ্তানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা আবার হুমকির সম্মুখীন হয়। চলতি বছরের অক্টোবরে গত ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে সাত দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত ১ থেকে ২০ নভেম্বর সময়ে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ছয় শতাংশ, যা এই শিল্পের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।’
প্রধান বাজারগুলোতে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অক্টোবর মাসে আবারও তা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, যা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব হিসেবে দেখছেন রুবানা হক।
তিনি জানান, চলতি বছরের অক্টোবরে গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালী ও জাপানে পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে আট শতাংশ, ১০ শতাংশ, ছয় শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ।
পোশাকের খুচরা বিক্রি ও চাহিদাতে ধ্বসের কথা উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ‘করোনা মোকাবিলায় বিশ্বে গৃহীত লকডাউনের কারণে গত ফেব্রুয়ারী থেকেই পোশাকের খুচরা বিক্রিতে ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে লকডাউনের প্রভাবে খুচরা বিক্রি ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমছে, যার প্রভাবে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি মূল্য উভয়ই কমছে। গত কয়েক মাসে ইউরোপে খুচরা বিক্রি হ্রাসের হার কিছুটা কমে আগস্টে -৫ শতাংশ হয়, যা সেপ্টেম্বরে ইউরোপে বেড়ে দাঁড়ায় -১৩ শতাংশ।
পোশাকের নজিরবিহীন দরপতনের কথা উল্লেখ করে রুবানা হক জানান, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগ থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারন করে। ২০১৪-২০১৯ এই পাঁচ বছরে বাংলাদেশী পোশাক রপ্তানি মূল্য হারিয়েছে বছরে গড়ে প্রায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বে বাংলাদেশী পোশাকের দরপতন হয় পাঁচ দশমিক ২৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই দরপতন ছিল চার দশমিক ৮১ শতাংশ। দরপতনের এই ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রেখে সামগ্রিক বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশী পোশাকের দরপতন হয়েছে অক্টোবরে চার দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ১ থেকে ২০ নভেম্বরে চার দশমিক ৯২ শতাংশ।
ছবি: উইকিপিডিয়া