চট্টগ্রাম: বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীর সাথে মত বিনিময় সভা করেছেন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম সিটির আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, সাবেক পরিচালক হাবিব মহিউদ্দিন, বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হুসেইন আকবর আলী এবং দূতাবাসের কমার্শিয়াল সেক্রেটারী সুলেমান খান বক্তব্য রাখেন।
এ সময় চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) ও মো. আবদুল মান্নান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের হাই কমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্ভাবনাময় হলেও আশানুরূপ নয়। এক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। উভয় দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে আরো বেশি সম্পর্কোন্নয়নের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।’
তিনি পাকিস্তানে বাংলাদেশী পণ্যের এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানি পণ্যের একক প্রদর্শনীর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন এবং প্রচলিত পণ্যের বাইরে নতুন নতুন পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে অন্তর্ভূক্তির আহ্বান জানান। বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে পাকিস্তানি কাঁচামাল ব্যবহার করে ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। হাই কমিশনার উভয় পক্ষ যাতে সমানভাবে উপকৃত হয় সেই লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ মধ্য এশিয়াসহ পাকিস্তান থেকে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করে থাকে। এক্ষেত্রে চায়না-পাকিস্তান ইকনোমিক করিডোর (সিপিইসি) ব্যবহার করে সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য পরিচালনা করা হলে তা সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময়, পর্যটন প্রসারে ট্যুর প্রোগ্রাম আয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট ভিসা সহজীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘পাকিস্তানে গড় ট্যারিফ বাংলাদেশ থেকে কম হলেও উচ্চ শুল্কের কারণে বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এক্ষেত্রে কোটা ও সংখ্যার সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্য ও মানগত বাধ্যবাধকতা এবং পাকিস্তান সরকারি এজেন্সী কর্তৃক একচ্ছত্রভাবে আমদানি অন্যতম বাধা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানি অনেক বেশী উল্লেখ করে চেম্বার সভাপতি শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূরীকরণ, রুলস অব অরিজিন সহজীকরণ এবং সমুদ্র পথে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে করাচি বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সরাসরি ঢাকা-করাচি বিমান যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানান তিনি।
চেম্বার পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব সিপিইসি ব্যবহার করে কিভাবে লীড টাইম কমানোসহ ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারে তার উপর একটি অনলাইন প্রেজেন্টেশনের অনুরোধ জানান।
অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আর্থিক লাভ এবং ব্যবসায় করার সুযোগের উপর নির্ভর করে কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।’
সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘চিটাগাং চেম্বার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সমুদ্র পথে সরাসরি তুলা, ফেব্রিক্স ইত্যাদি আমদানি করা গেলে ব্যবসা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।’
বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হুসেইন আকবর আলী উভয় দেশের রাষ্ট্রীয় শিপিং কর্পোরেশনের আওতায় স্বল্প ধারণক্ষমতার ভ্যাসেল এর মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে করাচি-চট্টগ্রাম সরাসরি জাহাজ চালানোর অনুরোধ জানান।
চেম্বারের সাবেক পরিচালক হাবিব মহিউদ্দিন পাকিস্তান থেকে আমদানিকালে ইলেক্ট্রিক ফ্যানসহ অন্যান্য কাঁচামালের উচ্চ শুল্ক হ্রাস করার অনুরোধ জানান।
দূতাবাসের কমার্শিয়াল সেক্রেটারী মুহাম্মদ সুলেমান খান করাচি চেম্বারের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে একটি এ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চিটাগাং চেম্বারের প্রতি অনুরোধ জানান।
নিউজ রিলিজ