ঢাকা: দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত করতে এবং এ খাতের প্রতিভাবান তরুণদের জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথোরিটির (বিএইচটিপিএ) সাথে বাংলাদেশে চারটি আইসিটি প্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছে হুয়াওয়ে।
এ নিয়ে উল্লেখিত তিন পক্ষের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিসিসি মিলনায়তনে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তির আওতায় শীঘ্রই শিক্ষার্থী, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়, ডেভেলপার, স্টার্ট আপ এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০’, ‘আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার’, ‘হুয়াওয়ে আইসিটি অ্যাকাডেমি’ এবং ‘কিউরেটিং বাংলাদেশি স্টার্টআপস’- শীর্ষক চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রোজেক্ট শুরু হবে। এর মধ্য থেকে বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০, আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার এবং কিউরেটিং বাংলাদেশি স্টার্টআপস -এই তিনটি আয়োজনে হুয়াওয়ের সাথে একযোগে কাজ করবে বিসিসি। হুয়াওয়ে আইসিটি অ্যাকাডেমি সংশ্লিষ্ট কাজে হুয়াওয়ের পাশে থাকবে বিএইচটিপিএ।
উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বোধনের দিন থেকে পরবর্তী অন্তত তিন বছরের জন্য নিজ নিজ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ রেজাউল করিম (মহাপরিচালক, ডিএসএ, প্রকল্প পরিচালক, এলআইসিটি প্রকল্প)।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝেংজুন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএইচটিপিএ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, আইসিটি বিভাগের সিনিয় সচিব এনএম জিয়াউল আলম, বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতীম দেব।
অনুষ্ঠানে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমাদের সমস্ত উদ্যোগ এবং প্রকল্পগুলি তরুণ, আইসিটি এবং কর্মসংস্থাননির্ভর। এই চুক্তিটি তরুণ শিক্ষার্থী, আমাদের গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমাদের উদ্ভাবকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হবে। একই সাথে হুয়াওয়ের উদ্ভাবিত বিশ্বের সর্বশেষতম প্রযুক্তিগুলির অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে। এই চুক্তির আওতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং একাডেমিয়ার মধ্যকার ব্যবধানও কমাতে সক্ষম হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের যাত্রায় অবদানের জন্য আমরা হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের কাছে কৃতজ্ঞ।’
হুয়াহুয়’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝ্যাং ঝেংজুন বলেন, ‘আধুনিক সময়ে যে কোনো দেশের যে কোনো শিল্পখাতের জন্য একটি ডিজিটাল কাঠামো থাকা আবশ্যক। এ জন্য নতুন ও পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে দেশের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে তরুণদের মধ্যে আইসিটি খাতে দক্ষতা থাকা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আমাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে আইসিটি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির উৎসাহ তৈরি করবে, যার ফলশ্রুতিতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নটি ধীরে ধীরে বাস্তবতার পথে এগিয়ে যাবে।’
দু’মাসব্যাপী ‘বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০’ কর্মসূচিটি আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে। হুয়াওয়ে ও বিসিসি’র পক্ষ থেকে দেশের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা হবে। এছাড়া, প্রাথমিকভাবে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল সংক্রান্ত বিভাগের পক্ষ থেকে বিসিসি বা হুয়াওয়ের সাথে যোগাযোগ করেও তালিকাভুক্ত হওয়া যাবে। শুধুমাত্র নিবন্ধিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রহী শিক্ষার্থীগণ এই প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত হতে পারবেন এবং অনলাইনে কোর্স ও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবেন। প্রিলিমিনারি, সেমিফাইনাল এবং জাতীয় পর্যায়ের পর শীর্ষ তিনটি গ্রুপ হুয়াওয়ে আইসিটি কম্পিটিশনের রিজিওনাল ফাইনালে এবং বৈশ্বিক ফাইনালে অংশ নিতে পারবে।
‘আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার’ কর্মসূচিতে বিসিসি ও হুয়াওয়ে’র সমন্বয়ে একটি যৌথ দল গঠন করা হবে, যার উদ্দেশ্য হবে এই ইনোভেশন সেন্টারের মাধ্যমে সরকারি মালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করা।
ডেভেলপাররা এর মাধ্যমে হুয়াওয়ে ও বিসিসি’র কাছ থেকে আইসিটি প্রশিক্ষণ ও সহায়তাও গ্রহণ করতে পারবেন। ফলে, একদিকে যেমন তারা বিনামূল্যে কম্পিউটার ও এআই প্ল্যাটফর্মের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, অন্যদিকে, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ও বাজার পরিচিতির প্রশ্নে সময়ও সাশ্রয় করতে পারবেন।
এ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে হুয়াওয়ে আইসিটি অ্যাকাডেমি প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ দিবে, হুয়াওয়ের সনদ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে।
পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারে একটি করে আইসিটি অ্যাকাডেমির কাঠামো এবং ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার দায়িত্বে যৌথভাবে নিয়োজিত থাকবে হুয়াওয়ে এবং বিএইচটিপিএ।
‘কিউরেটিং বাংলাদেশ স্টার্টআপ’র মাধ্যমে বাংলাদেশের স্টার্টআপ কালচারের জন্য লোকাল এবং গ্লোবাল ফ্রন্টিয়ার সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার পরিকল্পনা করছে বিসিসি এবং বিএইচটিপিএ, যার মাধ্যমে দেশের এবং দেশের বাইরের উদ্যোক্তাগণ একসাথে মিলে পরিকল্পনা গঠন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বাস্তবায়নের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা অর্জন করেন।
উল্লেখিত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশনটি আগামী মাস থেকে শুরু করার পরিকিল্পনা রয়েছে। এই প্রতিযোগিতাটি মূল দুইটি অংশে বিভক্ত থাকবে, যেমন- প্রাক্টিক্যাল কম্পিটিশন এবং ইনোভেশন কম্পিটিশন, ফলে অংশগ্রহণকারীদের পুঁথিগত দক্ষতার পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজের দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত খাতে পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়নে উদ্ভাবনীক্ষমতার দক্ষতাও যাচাই করা সম্ভব হবে। সুরক্ষা, বিগ ডাটা ও এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রভৃতির মত কৌশলগত বিষয়াদি এই প্রতিযোগিতায় উঠে আসবে।