চট্টগ্রাম: রোববার (১৮ জুলাই) পর্যন্ত জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিকদের ঈদুল আজহার বোনাস না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি হোটেলে বিলস কর্তৃক আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় ক্ষোভ জানানো হয়।
এতে বক্তারা বলেন, ‘শ্রম আইন ও বিধি মোতাবেক শ্রমিকেরা বছরে দুইটা মূল মজুরির সমপরিমাণ উৎসব বোনাস প্রাপ্য। তাছাড়া গত ২৬ জুন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং এসোশিয়েশন (বিএসবিআরএ) এবং জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের সাথে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনায়ও মালিক পক্ষ ঈদুল আজহার বোনাস দিবেন বলে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু আজকে পর্যন্ত কেবল মাত্র তিন-চারটা ইয়ার্ডে ৮০০ টাকা এবং এক হাজার টাকা করে বকশিস দেয়া হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন। মালিকপক্ষ কোন ইয়ার্ডে ঈদুল আজহার বোনাস না দিয়ে শ্রম আইন, বিধি এবং ২৬ জুনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করেছেন।’
তারা বলেন, ‘করোনা অতিমারির মধ্যেও শ্রমিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। একই সাথে দেশের অর্থনীতি ও মালিকের ব্যবসায়-মুনাফার চাকা সচল রেখেছেন।’
সভায় উপস্থিত শ্রমিক নেতৃবৃন্দ দ্রুত জাহাজ ভাঙ্গা সেক্টরের শ্রমিকদেরকে ঈদুল আজহার বোনাস দেয়ার জোর দাবি জানান।
জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম শ্রম আদালতের আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ এডভোকেট জানে আলম, পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরী, শ্রম দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোকশেদুল আলম, ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ও শ্রমিক নেতা শফর আলী, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি শ্রমিক নেতা এএম নাজিম উদ্দিন, জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতা শফি বাঙ্গালী, জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের কোষধ্যক্ষ রিজওয়ানুর রহমান খান, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান, ইন্ডাস্ট্রি অল শিপ ব্রেকিং সেক্টরের সমন্বয়ক শরীফুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক নূরুল আবসার, বাংলাদেশ ফ্রী ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কেএম শহিদুল্লাহ, জাহাজভাঙ্গা শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ আলী, মানিক মণ্ডল, মোহাম্মদ ইদ্রিছ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিলসের কর্মকর্তা ফজলুল কবির মিন্টু। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাহাজভাঙ্গা শিল্প সেক্টরে বিলস-ডিটিডিএ’র উদ্যোগে বিগত দিনের কার্যক্রমের রিপোটিং এবং ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ফজলুল কবির মিন্টু।
সভায় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও পরিচয় পত্র দেয়া, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করা, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রাত্রিকালীন বন্ধ রাখা এবং অতিরিক্ত কর্মঘন্টা কাজ না করানো শ্রমিকের পেশাগত ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, সব ইয়ার্ডে দক্ষ সেফটি অফিসার নিয়োগ, শ্রমিকদের মানসম্পন্ন এবং উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়। সভায় দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় শ্রম আদালত নিষ্ক্রিয় থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।