চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের তারকা সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ একাধিক পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাচিত সহ-সভাপতি।
তবে সিইউজে বা বিএফইউজেতেও মন ভরে নি তার, এবার সাংবাদিক রিয়াজের নজর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দিকে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে সবার দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করেছেন এ সাংবাদিক নেতা।
গত ৭ ডিসেম্বর দুপুর দুইটা ৪৮ মিনিটে ফেসবুক পোস্টে রিয়াজ হায়দার লিখেছেন, ‘এবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নিয়ে ভাবছি—। টানা ২০ বছর সাংবাদিক ইউনিয়ন করেছি। তৃণমূল থেকে চট্টগ্রামের শীর্ষ পদে সদস্য সহযোদ্ধারা আস্থা রেখেছেন। কখনো সেই আস্থার অবমূল্যায়ন হতে দিই নি। এই দুই দশকে বিএনপি, ওয়ান ইলেভেন ও আওয়ামী লীগ সরকার; এই ত্রিমাত্রিক সময়ে অনেক অম্ল মধুর অভিজ্ঞতাও হয়েছে। প্রলোভন, ভয় ভীতি হুংকার উড়িয়ে দিয়ে পেশাগত ও সাংগঠনিক সততা-মর্যাদা রক্ষায় অটুট থেকেছি। আমার এমন অবস্থান চরম শত্রু ভাবাপন্নরাও স্বীকার করেন, এখানেই আমার মনের তৃপ্তি।
এর মধ্যে অনেকের মতোই সাংবাদিকদের অন্য কোনো সংগঠনের নেতৃত্বে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হইনি। শুধু একটি সংগঠনই করেছি। অর্থাৎ যেটা করেছি, সেটাতেই ছিল চূড়ান্ত মনোযোগ। শতভাগ দরদ দিয়েই করেছি। আমাদের দ্বিতীয় আবাস চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। ২০ বছরের সাংগঠনিক এ অভিজ্ঞতা ধারণ করে এবার প্রেসক্লাব নিয়ে ভাবতে চাই। সবার দোয়া ও আশীর্বাদ আশা করছি।’
পোস্ট করার পর থেকেই কমেন্টস বক্সে একাধিক শুভাকাঙ্খী রিয়াজ হায়দারের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন। বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল দশটা পর্যন্ত আমিসহ এতে কমেন্ট করেছেন ২২১ জন এবং পোস্ট শেয়ার করেছেন নয় জন।
চট্টগ্রাম পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। পেশাজীবী নেতা হিসেবে গত ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার কান্ডারী হতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তবে চেষ্টা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন এ নেতা।
তবে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিইউজের নির্বাচনে সভাপতি পদে নাজিম উদ্দিন শ্যামলের কাছে হেরেছিলেন রিয়াজ। বলা হয়ে থাকে, সাংবাদিকদের একটি পক্ষ জোট হয়ে সেই নির্বাচনে তাকে পরাজিত করে। তবে এর কিছুদিন পরেই বিএফইউজের নির্বাচনে সহ সভাপতি পদে জয়ী হয়ে সেই হারের বদলা নেন তিনি।
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন ইস্যুতে আ জ ম নাছিরের পক্ষে গোল টেবিল বৈঠক, নাগরিক সংলাপ, সভা, সমাবেশ ও মানব বন্ধনের আয়োজন ও নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে তাকে।
সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্র সৈনিক রিয়াজ হায়দার। যে কোনো সাংবাদিকের বিপদে-আপদে এগিয়ে যান তিনি। জুনিয়র সাংবাদিকদের সাথেও রয়েছে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। বাগপটু এ সাংবাদিক নেতা চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সমান পরিচিত। তিনি চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সদস্য পদও পেয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য। এছাড়াও তিনি ‘চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’ এর আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুদর্শন ও আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী রিয়াজ হায়দার একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
সমালোচনাকে তিনি ভয় পান না বা সমালোচনাকে বরাবরই ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করেন রিয়াজ।
২০১৭ সালের এক রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছিলেন তিনি। সেবার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান রিয়াজ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৭-১০ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও বর্তমানে সেই আঘাতের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান রিয়াজ হায়দার আসন্ন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব নির্বাচনে সভাপতি পদে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন
নবীন-প্রবীণ সদস্যদের সেতুবন্ধন ও প্রাণের ঠিকানা হিসেবে সাংবাদিকদের দ্বিতীয় আবাস চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে গড়তে এর সদস্যদের ভোট এবং সবার দোয়া-আশীর্বাদ চেয়েছেন তিনি।
আগামী ৩১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি এটিএন বাংলার চট্টগ্রাম বিভাগ প্রধান আলী আব্বাস।
২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সর্বশেষ দ্বি বার্ষিক নির্বাচন হয়েছিল।
সেবারের মতো এবারো নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন কবি ও প্রথম আলোর সাংবাদিক ওমর কায়সার।
উইকিপিডিয়া বলছে, ‘চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব বাংলাদেশের চট্টগ্রামের জামাল খান সড়কে অবস্থিত সাংবাদিকদের পেশাজীবি সংগঠন এবং মিলন সভা। এটি ১৯৬২ সালে গঠিত হলেও ১৯৬৪ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উদ্বোধন করেন। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, প্রাক্তন সাংবাদিক, সরকারী-বেসরকারী তথ্য কর্মকর্তা এবং যে সকল ব্যক্তিবর্গ নিয়মিত খবরের সূত্র হন, তারা।’