‘আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কুষ্ঠকে পরাস্ত করব’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রতি বছর জানুয়ারী মাসের শেষ রোববার ‘বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস’ পালন করা হয়। কুষ্ঠরোগ চিকিৎসায় ভাল হয়। বাংলাদেশে বিনামূল্যে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু এখনো অনেক মানুষ জানে না যে, কুষ্ঠরোগ ভাল হয়। এই রোগ সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা বা কুসংস্কার থাকার কারণে সমাজে তারা অবহেলার শিকার হয়।
‘বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস’ উদযাপনের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরী করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পরিমিতে আলো-বাতাসহীন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসরত হতদরিদ্র মানুষেরা এ রোগে আক্রান্ত হয়।
কুষ্ঠ রোগের লক্ষণসমুহ হলো শরীরের চামড়ায় হাল্কা বাদামী/লালচে অনুভুতিহীন দাগ, যা চুলকায় না, ঘামে না কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় দাগের লোমও ঝরে যেতে পারে; চামড়ায় লালচে ফুলা দাগ দেখা দিতে পারে; চামড়ায় গুটি গুটি ফুলা দাগ দেখা দিতে পারে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহজে এ সম্পর্কিত সহায়তা পাওয়া যায়। আমরা একটু সচেতন থাকলে, শুরুতে চিকিৎসা নিলে অঙ্গ বিকৃতি ঘটে না।
কুষ্ঠরোগ ‘মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি’ নামক জীবানোঘটিত একটি রোগ। এ রোগ বিশেষ করে মানুষের চামড়া ও প্রান্তিক স্নায়ুকে আক্রমণ করে। চামড়া তথা প্রান্তিক স্নায়ু আক্রান্ত হওয়ায় হাত-পা এবং চোখে অনুভুতিহীনতা ও প্রতিবন্ধিতা দেখা দিতে পারে। রোগ শনাক্ত করতে দেরী হলে রোগীর অঙ্গ বিকৃতি দেখা দেয়, যা পরে পঙ্গুত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।
কুষ্ঠরোগ শুধু একটি চিকিৎসা-সংক্রান্ত সমস্যা নয় বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। কুষ্ঠ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতিবাচকভাবে বিভিন্ন সংবাদ ও কুষ্ঠ-বিষয়ে সাফল্যমূলক তথ্য ও খবরা-খবর পরিবেশন করা প্রয়োজন। বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কুষ্ঠ বিষয়ে শিক্ষা বিস্তার করতে হবে। কুষ্ঠ আক্রান্তদের জন্য যে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এদেশে কাজ করছেন, তাদের আরো গণসচেতনতামূলক কাজ করা দরকার।
আসুন ‘বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস’ উদযাপনের মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করে, তাদের সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন আনি, তাদের মানবাধিকার রক্ষায় আমরা সকলে এগিয়ে আসি। কুষ্ঠমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলি।
লেখক: নাট্যজন ও উন্নয়ন কর্মী