হাবিবুল হক বিপ্লব: গেল বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আপনি কী করছিলেন? মনে পড়ছে? নতুন এক বছর তখন মাত্র শুরু হয়েছে। আপনার হয়তো নতুন বছরের জন্য ছিল অনেক পরিকল্পনা। অনেক স্বপ্ন। অনেক প্রতিজ্ঞা।
ধরা যাক, জানুয়ারির সেই প্রথম সপ্তাহে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এক ফিউচারোলজিস্ট বা ভবিষ্যৎদ্রষ্টার সঙ্গে আপনার দেখা হল। তিনি আপনাকে জানালেন, ঠিক তিন মাস পর পৃথিবীর কয়েকশো কোটি মানুষ যার যার ঘরে বন্দী হয়ে থাকবে। বড় বড় নগরীগুলোকে মনে হবে প্রাণহীন মৃত্যুপুরী।
দিনের বেলাতেও রাস্তা-ঘাট থাকবে জনশূন্য। বন্ধ হয়ে যাবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধ থাকবে দোকানপাট-বার-রেস্টুরেন্ট-শপিং মল। বন্ধ হবে সব খেলাধূলা-এমন কি বাতিল হয়ে যাবে অলিম্পিক গেমস। জেলখানা থেকে বন্দীদের ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলা হবে।
প্রতিটি দেশ তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেবে। বন্ধ হয়ে যাবে বিমান চলাচল। শেয়ার বাজারে বিরাট ধস নামবে। সুপার মার্কেটে লোকে টয়লেট রোল আর খাবারের প্যাকেটের জন্য মারামারি করবে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বেকার হয়ে যাবে কোটি কোটি মানুষ। এক অদৃশ্য শত্রুর আতংকে প্রতিটি মানুষ অন্য মানুষকে এড়িয়ে চলবে, অন্তত দশ হাত তফাতে থাকবে।
জানুয়ারিতে এ ভবিষ্যৎবাণীকে আপনি পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিতেন। এ ফিউচারোলিজস্টকে মনে হত বদ্ধ উন্মাদ। তার কথা বিশ্বাস করার মত লোক খুঁজে পাওয়া হত দুস্কর।
এবার ফাস্ট-ফরোয়ার্ড করে ফিরে আসা যাক এপ্রিল ২০২০ এর ২১ তারিখে।
এ বাক্যটি যখন আপনি পড়ছেন, সেই মূহুর্তে বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোক, অর্থাৎ প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ তাদের ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এত বেশি সংখ্যাক মানুষ একই সময়ে, একটানা, এত দীর্ঘকাল তাদের ঘরে বন্দী থাকার নজির আর নেই। এক অদৃশ্য ভাইরাসের আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব ব্যবস্থা।
এ অবস্থা থেকে কখন মুক্তি মিলবে তার কোন সুস্পষ্ট ধারণা কেউ দিতে পারছেন না। কিন্তু করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্ব সম্পর্কে যে সব বিশেষজ্ঞ এবং ফিউচারোলজিস্ট এরই মধ্যে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন, তারা সবাই একটা বিষয়ে একমত; পৃথিবী আর আগের মত নেই। গত এক বছরেরও বেশি কাল সময়ে যা ঘটেছে, তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
এ মহামারির পর পাল্টে যাবে আমাদের কাজ-প্রাত্যহিক জীবন-ভ্রমণ-বিনোদন থেকে শুরু করে ব্যবসায়-বাণিজ্য-অর্থনীতি-রাষ্ট্র-সমাজ সবকিছু।
লেখক: সংস্কৃতি কর্মী, চট্টগ্রাম