চট্টগ্রাম: কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সাংবাদিক প্রয়াত সিদ্দিক আহমেদ, আজ ৩১ জুলাই তার ৭৫তম জন্মদিন।
সিদ্দিক আহমেদ ১৯৪৬ সালের ৩১ জুলাই রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের গচ্চি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সিটি কলেজে তার শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। ষাটের দশকে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের মত তিনিও আন্দোলন-সংগ্রামের জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৪ সালের সরাসরি যুক্ত হন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে সান্নিধ্য পান প্রখ্যাত লেখক সত্যেন সেনের। ১৯৭০ সালে তিনি খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই সময়ে প্রকাশিত হয় গোপন কমিউনিস্ট পার্টির প্রকাশ্য মুখপাত্র ‘একতা।’ যার সম্পাদক ছিলেন দৈনিক সংবাদের সম্পাদক বজলুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন বর্তমানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। সিদ্দিক আহমেদ একতায় যোগ দেন। একতায় থাকা অবস্থায় তিনি লেখালেখি শুরু করেন। লিখতেন তৎকালীন শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে। এরই মধ্যে তিনি সখ্যতা গড়ে তোলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক রণেশ দাশগুপ্তের সাথে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গোপনে চট্টগ্রামে ফিরে এসে নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি গচ্চি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে বেশকিছু পেশায় যুক্ত হন। তবে পঠন-পাঠনে তিনি সক্রিয় ছিলেন।
কবি বিপ্লব বিশ্বাস সম্পাদিত মৃগয়াতে নিয়মিত লিখতেন স্বনামে-বেনামে। ১৯৯১ সালে তিনি দৈনিক আজাদীতে যোগ দেন। দৈনিক আজাদীতে তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটান তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা মেধা ও মননের। এ সময় তিনি পাঁচ শতাধিক প্রবন্ধ ও নিবন্ধ রচনা করেন। প্রকাশিত হয়েছে নয়টি মূল্যবান আকর গ্রন্থ। তার জ্ঞ্যানের পরিধি সম্প্রসারিত হওয়ার নেপথ্য রহস্য হল- তিনি ছিলেন একজন বিরল প্রজ পড়ুয়া। তার ব্যক্তিগত বইয়ের সংগ্রহশালা বিশাল। এ সংগ্রহশালায় ছিল বিশ্বের দুষ্প্রাপ্য বহু গ্রন্থ।
ব্যক্তিগত জীবনে সিদ্দিক আহমেদ ছিলেন বন্ধুবৎসল। বিশেষ করে তরুণদের সাথে তার সখ্যতা ছিল চোখে পড়ার মত। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় প্রকাশিত হয়েছে সিদ্দিক আহমেদ সম্মাননা স্মারক গ্রন্থ। ৩৮৬ পৃষ্ঠার এ সম্মাননা স্মারক গ্রন্থে তাকে নিয়ে লিখেছেন শীর্ষ স্থানীয় কবি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তার মৃত্যুর পর আরো একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ শিরোনামে। ৪৮০ পৃষ্ঠার এ স্মারক গ্রন্থে তাকে নিয়ে লিখেছেন ১২১ জন কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক ও ভক্ত-অনুসারীরা। এছাড়া ১৮টি অগ্রন্থিত এবং দশটি নির্বাচিত লেখা পুনঃপ্রকাশ করা হয়। সংযোজিত হয়েছে ১৮৫টি আলোকচিত্র।
সিদ্দিক আহমেদকে নিয়ে প্রকাশিত সম্মাননা স্মারক ও স্মারক গ্রন্থ দুটি সম্পাদনা ও প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন নুরুল আবছার। বিরল জ্ঞানের অধিকারী সিদ্দিক আহমেদ ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তার ৭৫তম জন্মদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায়।