চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি স্বনামধন্য লোক গবেষক ও কবি শামসুল আরেফীনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৯৮টি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক দশ খণ্ডে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ’-এ এসব নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ ২০২০-২০২১-এ প্রকাশিত এ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজাহান মিয়া।
শামসুল আরেফীন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন প্রজেক্ট’-এর আওতায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় তথ্যসংগ্রাহক, গবেষক ও নিবন্ধকার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। ‘এনসাক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন’ এর প্রধান সম্পাদক-প্রকল্প পরিচালক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ এ প্রকল্পের আওতায় পটিয়া, চন্দনাইশ ও কর্ণফুলী উপজেলায় তথ্যসংগ্রাহক, গবেষক ও নিবন্ধকার হিসেবে নিয়োগদানের পর সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় শামসুল আরেফীনকে নিবন্ধকার হিসেবে নিয়োগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষের দশটি খণ্ডেই শামসুল আরেফীনের নিবন্ধগুলো প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম খণ্ডে তার ১২টি, দ্বিতীয় খণ্ডে ১৩টি, তৃতীয় খণ্ডে ১৪টি, চতুর্থ খণ্ডে ১২টি, পঞ্চম খণ্ডে ১৫টি, ষষ্ঠ খণ্ডে ছয়টি, সপ্তম খণ্ডে ছয়টি, অষ্টম খণ্ডে পাঁচটি, নবম খণ্ডে দশটি এবং দশম খণ্ডে পাঁচটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
নিবন্ধগুলোতো চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, কর্ণফুলী, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায়, এছাড়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, গণহত্যা, অপারেশন, অ্যাম্বুশ, সম্মুখযুদ্ধ প্রভৃতির বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এসব অঞ্চলের রাজাকার-তালিকা এবং বধ্যভূমির বিবরণও দেয়া হয়েছে। প্রতিরোধ যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নাম ও ভূমিকা, বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর বিস্তারিত তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।
শামসুল আরেফীনের জন্ম ১৯৭৭ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সদর এলাকায় । পিতার নাম আবদুল মোবিন ও মাতার নাম তমনারা বেগম। চন্দনাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা অর্জনকারী শামসুল আরেফীন ’৯০ দশকের প্রথমে ছড়া-কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করেন এবং শূন্য দশকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিক, সাহিত্য পত্রিকা, বিভিন্ন শিশুতোষ পত্রিকা ও ছড়াসংকলনে অনেক ছড়া ও কিশোর কবিতা লিখেন। ’৯০ দশকের প্রায় মাঝামাঝি তিনি লোক গবেষণায় সম্পৃক্ত হন। অতঃপর তৎপর হন বিলুপ্ত ও বিস্মৃতপ্রায় লোককবি ও তাদের রচনা উদ্ধারে। এ কারণে তিনি দিনের পর দিন চট্টগ্রামের পথে-প্রান্তরে পায়ে হেঁটেছেন এবং বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার আবিষ্কৃত বা বর্ণিত বিলুপ্ত ও বিস্মৃতপ্রায় লোককবি শতাধিক। দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বলাকা, হাওলাদার ও তৃতীয় চোখ থেকে তার প্রকাশিত ১৮টি গ্রন্থের মধ্যে আহমদ ছফার অন্দরমহল (২০০৪), রুবাইয়াত-ই-আরেফীন (কাব্য; ২০১৪), বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার দুর্লভ দলিল (২০১৬), আঠারো শতকের কবি আলী রজা ওরফে কানুফকির (২০১৭) এবং আস্কর আলী পণ্ডিত: একটি বিলুপ্ত অধ্যায় (২০০৬) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।