নুরুন্নবী নুর: ‘এই সব দিন রাত্রি’ হুমায়ূন আহমেদের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। উপন্যাসটিকে ঘিরে ১৯৮৫ সালে সম্প্রচারিত একই নামে নির্মিত হয়েছিল একটি ধারাবাহিক নাটক, যা বাংলাদেশের জাতীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়। ৫৯ পর্ব বিশিষ্ট নাটকটি সে সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
‘এই সব দিন রাত্রি’ হুমায়ূন আহমেদের একটি অনন্য সৃষ্টি। উপন্যাসটি নাটকে প্রাণ দিয়ে আরো বেশি সৃষ্টিশীল ও আবেদনময় করে তুলেছিল, নাটকটির প্রযোজক ও পরিচালক। এই সব দিন রাত্রি মূলত একটি একান্নবর্তী পরিবারের সুখ-দুঃখের গল্প। আশা ও আনন্দের, ব্যর্থতা ও বঞ্চনার গল্প। কিছু সাধারণ মানুষের সাধারণ কিছু স্বপ্নের গল্প।
নাটকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়: মানুষের জীবনে আশা-আনন্দ ও দুঃখ-বেদনা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মানুষ যতই আবেগীসৃষ্টি হোক না কেন, তাকে একটা সময়ে কঠোর হতে হয়। বাস্তবতার চাহিদায় তাকে সবকিছু মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হয়। অতীতের যত রকম স্মৃতি মানুষকে আকর্ষণ করুক বা মনে করিয়ে দিক, বর্তমানকে সুখী করতে চাইলে, সে সব স্মৃতিকে এড়িয়ে যেতেই হবে। হয়ত মাঝে-মধ্যে অতীত এসে কিছুটা সময় হৃদয়ে জায়গা করে নিলেও সেটাকে কখনই স্থায়িত্ব রূপ দেয়া যাবে না। কারণ, বর্তমান ও ভবিষ্যতে ভালো থাকতে চাইলে, অতীতের বিষয়টিকে অবশ্যই পাশ কাটিয়ে যেতে হবে।
‘এই সব দিন রাত্রি’ নাটকের একটা পর্বে বলেই দিয়েছেন, ‘কিছু গল্প যা কখনও শেষ হয় না। এইসব দিনরাত্রির গল্পও তেমনি একটি শেষ না হওয়া গল্প। দিনের পর দিন যায়। প্রচণ্ড শোকের তীব্রতাও এক সময় কমে আসতে থাকে। জীবন বয়ে চলে তার নিজস্ব গতিতে। এই সব দিন রাত্রির পরিবারে আনন্দ বেদনার কত কাব্যই না রচিত হয়।।’
‘এই সব দিন রাত্রি’ নাটকের সারসংক্ষেপণ হল: টুনী নামের একটি ৮-১০ বছরের মেয়ে, পরিবারের সকলের কাছে খুবই আদরের। মেয়েটির একটি কঠিন রোগ ধরা পড়ে। তার জন্য দেশে সর্বোচ্চ চিকিৎসা নেওয়ার পরও রোগটা গুরুতর দেখে চিকিৎসক জানান, দেশের বাইরে টুনীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যথারীতি টুনীকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বিদেশে চিকিৎসারত অবস্থায় দুর্ভাগ্যবশত টুনীর মৃত্যু হয়। টুনীর অকাল মৃত্যু পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারে না। টুনীর বাবা তো একদমই না। এমনকি টুনীর বাবা শেষ পর্যন্ত ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। সব মিলিয়ে প্রিয়জন হারানোর কারণে পরিবারটি একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে। বাস্তবতার সাথে কেউ চলতে পারছে না। একটা সময়ে সকলের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসতে লাগলো। আস্তে আস্তে সকলে মেনে নিচ্ছেন, তবে মাঝেমধ্যে স্মৃতিতে নাড়া দিলে মনটা মোচড় দিয়ে উঠে।
পারিবারিক ঘটনা নির্ভর নাটকটি দেখার পর দর্শক হিসেবে আমার ভিন্ন রকম অনুভূতির জন্ম হয়েছে। নাটকের ৪৫তম পর্ব পর্যন্ত নানা খুঁনসুটিতে ভরপুর ছিল। হাসি-কান্না, প্রেম- ভালোবাসা, বিয়ে, মৃত্যু, সুখ-দুঃখ, গান, ঠাট্টা, স্বপ্ন সবকিছু ছিল। যতই দেখছি, খুব উপভোগ করছি। হারানোর ভয়টা ছিল না। মাঝেমাঝে টুনীর শুধু একটু জ্বর আসত। ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যেত। ডাক্তাররাও তেমন জটিল করে কিছু বলত না।
নাটকটি যখন পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, তখন টুনীর পরিবারের নিজেকে একজন সদস্য মনে হচ্ছে। টুনীর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াটা আমিও মেনে নিতে পারছি না। ডাক্তারের পরামর্শ তো আর ফেলে দেয়া যায় না। মানবিকতাবোধ সম্পন্ন নাটকটি আমাকে বেশ স্পর্শ করেছে। নিজের চলার পথে একটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে। মাঝেমধ্যে নাটকটি দেখতে যেয়ে চোখের কোনে জল পর্যন্ত চলে এসেছে। নিজেকে তীব্রভাবে আবেগতাড়িত করে তুলেছে।
এই সব দিন রাত্রি দেখতে দেখতে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা-ভাবনা এসে ঘুরপাক খেয়েছে। আমার পরিবারও অনেকটা টুনীর পরিবারের মত। পরিবারে আমার অবস্থান টুনীর চাচা রফিকের মতোনই। রফিকের মত করে আমার পরিবারে নিজের অবস্থান এমন করে কখনও ভাবিনি। টুনীর মত আমারও অনেক ভাইপো আর ভাইজি রয়েছে। কাজী মেহফুজুল হকের মত আমার বাবা রয়েছেন। বোন ও বোনজামাই আছেন। অনেকটা শাহানা ও জহিরের মত। আবুল খায়ের মত মামা থাকলেও অতোটো স্বপ্নবাজ না। নিলু ভাবির মত চার চারজন ভাবি আছেন। দুইজন মায়ের মত আর দুইজন বোনের মত।
নাটকটি দেখতে যেয়ে বারবার ভাবতাম, ইশ, আমার যদি সোবহানের মত দুলাভাই থাকত, কবির মামার মত মামা থাকত। শফিকের মত আমার একটা ভাই হতো। হুমায়ূন আহমেদ বোধহয়, আমার মত এমন সম্পর্কগুলোর অভাব অনুভব করতেন বিধায় এইসব দিনরাত্রিতে লিখে গেছেন।
তাছাড়া, সচ্ছলর(ধনবান) মানুষের প্রতি মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হল, তারা অন্যের উপর জুলুম করে ভালো থাকে। বিষয়টা হুমায়ূন আহমেদ মানুষের চোখে ইতিবাচক করে তুলেছেন শারমিনের বাবার চরিত্রের মধ্য দিয়ে। আসলে সব বিত্তবানরা এমনটি নন। কিছু কিছু আর্থিক দিক দিয়ে সচ্ছল মানুষ আছেন, যারা টাকার অহংকার না করে সম্পর্কটাকে বড় করে দেখেন। তারা সাহায্য করতে আসেন, মনের মধ্যে ভয় নিয়ে। তারাও চায়, আপন মানুষের পাশে থাকতে। তারা চাই না, তাদের প্রতিপত্তি, ধন-সম্পদের কাছে অন্য কেউ ছোট হোক।
‘এই সব দিন রাত্রি’ নাটকে অনেক গুণীশিল্পী অভিনয় করেছিলেন। যাদের অনেকে প্রয়াত হয়েছেন। সে সময় প্রযুক্তির অভাব থাকলেও, শিল্পীদের ভালো অভিনয়ের কারণে নাটকটি সকলের কাছে বেশ প্রশংসনীয়। আমাদের মত নাট্য শিল্পীদের কাছে, ‘এইসব দিনরাত্রি’ থেকে অনেক কিছু শেখবার আছে। নাটকে দিলারা জামান মা চরিত্রের অভিনয় যেভাবে তুলে ধরেছেন, একজন দক্ষ অভিনত্রীর পক্ষেই তা সম্ভব। অন্যদিকে বাবার চরিত্রে কাজী মেহফুজুল হকের অভিনয় বেশ সাবলীল ও বাস্তবসম্মত। আমার কাছে একটা পরিবারে একজন বাবার ভূমিকা যতটুকু, তিনি তা ফুটিয়ে তুলেছেন। এতটুকুও ভাড়ামো মনে হয়নি। নব্বইয়ের দশকে যাদের জন্ম, তাদের কাছে কাজী মেহফুজুল হকদের মত অভিনয়শিল্পীরা বেশ পরিচিত।
এছাড়াও কবির মামা চরিত্রে আবুল খায়ের দারুণ অভিনয় করেছেন। মানুষটিকে নানা-নাতির অনুষ্ঠান, গম্ভীরায় নিয়মিত দেখা যেত। আমার খুব পছন্দের একজন অভিনেতা। এমন মানুষগুলোকে হারিয়ে ফেলেছি, এমনটা ভাবলে খুব কষ্ট হয়। সোবহান চরিত্রে আবুল হায়াতও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। উনাদের অভিনয় সম্পর্কে বলার কিছু নেই। জাত অভিনেতা যাদের বলা হয়! শফিক চরিত্রে বুলবুল আহমেদের অভিনয় এক কথায় অনবদ্য। নাটকটিতে মাঝেমাঝে উত্তম কুমারের মত লাগে। আমাদের দেশ বুলবুল আহমেদকে তেমন মূল্যায়ন করতে পারেনি, ভুল গ্রহে বুলবুলদের জন্ম। নাটকে তাঁর অভিনয় আমার কাছে সারাজীবন অনুকরণ ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
রফিক চরিত্রে আসাদুজ্জামান নুরের অভিনয়, আমার মত নগন্য নাট্যশিল্পীর কলমের মাধ্যমের প্রকাশ করা বেশ কঠিন। আসাদুজ্জান নুর ভাই যদি রাজনীতিতে পা না রেখে অভিনয়ে নিয়মিত হতেন, তাহলে তার কাছ থেকে এরূপ কালজয়ী কাজ আরো পাওয়া যেত। অভিনয় জীবনের শুরুর দিকের কাজগুলো নুর ভাইকে সারাজীবন শিল্পমনা মানুষ মনে রাখবে। নীলু চরিত্রে ডলি জহুরের অভিনয় অসাধারণ। বাঙালি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন ভাবি, যেমনটা হওয়া উচিত, তার চরিত্রের মধ্যদিয়ে তিনি তা ফুটিয়ে তুলেছেন। অভিনয়ের কথা বললে তিনি একজন আগাগোড়া অভিনয়শিল্পী, জাত অভিনেত্রী।
জহির চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদও বেশ উচ্চমার্গের অভিনয় উপহার দিয়েছেন। রাইসুল ইসলাম আসাদের অনেক কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে। এখানে নতুনভাবে আরো নতুন করে চেনার সুযোগ হয়েছে। তার প্রতি আমার একরাশ মুগ্ধতা সব সময় পাশে থাকে। নাটকে শারমিন চরিত্রে লুৎফুন্নাহার লতার অভিনয়ও বেশ গোছানো। বয়েস প্রজেকশন বেশ মধুর। প্রথম কোনো নাটকে এমন অভিনয়শিল্পীকে দেখলাম। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, নাটকে চেহেরা নয়, গুণটাই আসল। নাটকের আরেকটি প্রিয় চরিত্র হল শাহানা, চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন শিল্পী সরকার অপু। চরিত্রটির নামের চেয়ে চেহেরাটা আমার কাছে বেশ পরিচিত। অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করতে দেখেছি। এই সব দিন রাত্রিতে তার অভিনয় প্রশংসার দাবিদার। আনিস চরিত্রে খালেদ খানের অভিনয়ও বেশ ভালো হয়েছে। প্রথমে চিনে উঠতে পারিনি। একজন বেকার ম্যাজিশিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেন।
এবার বলা যাক, নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র টুনীর কথা। শফিকের কন্যা। যার মৃত্যু নাটকটিকে অন্য রকম মুহূর্ত এনে দিয়েছে। সে সময় হুমায়ূন আহমেদকে অনেকে চিঠি দিয়েছেন, যাতে মৃত্যুটা না দেখায়। কিন্তু লেখক তার সিদ্ধান্তে অটল। টুনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন নায়ার সুলতানা লোপা। খুবই দুঃখের বিষয়, ২০১৪ সালে প্রাপ্ত বয়সে টুনী চরিত্রের লোপা সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুটা নিয়ে এখনও সংশয় রয়ে গেছে।
‘এই সব দিন রাত্রি’ নাটকের অন্যান্য চরিত্রে এনামুল হক, জামাল উদ্দিন হোসেন, সিরাজুল মজিদ মামুন, সানি আলম, সুজা খন্দকার, তানজীলা রেজা রীবা, মাকিদ হায়দার, বর্ণালী বড়ুয়া, আব্দুল মতিন-২, আজাদ ইসলাম চুনি, খন্দকার আবু জাফর, জাহাঙ্গীর হোসেন জীবন, আলমগীর হোসেন, শফিকুর রহমান, মুস্তফা ফারুক, মো. কামরুজ্জামান, মাসুদ আলী খান, অতিথিশিল্পী মুকিতসহ আরো অনেক অভিনয়শিল্পী নাটকটিতে করেছেন। তাদের অভিনয়ে নাটকটিকে অসামান্য জায়গায় নিয়ে গেছে। ছোট ছোট চরিত্রগুলোর উপস্থিতি নাটকটিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছেন।
‘এই সব দিন রাত্রি’ নাটকের আলোক সরবরাহ যদি আরেকটু ভালো হোত, তাহলে ক্যামেরায় চরিত্রগুলো আরো একটু আলোকিত হত। আলো-আধারি টাইপের ছিল। জানি না, পরিচালক ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করেছেন কিনা! আলোক বিন্যাসে ছিলেন আবদুল হক, আব্দুল হাকিম, কৃষ্ণ সরকার, এমাদ উদ্দিন, নবী উল্ল্যাহ, সোহরাব হোসেন। আলোক নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মীর আহমদে হোসেন ও মো শহীদুল্লাহ্। আলোক নির্দেশনায় ছিলেন এইচকে মাহমুদ ও মুহম্মদ ইদ্রিস।
চিত্রনাট্য বেশ গোছালো মনে হয়েছে। ‘এই সব দিন রাত্রি’ দেখার পর হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস পড়ার আগ্রহ জন্মেছে। যেমনটা সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দেখে বিভূতিভূষণ পড়েছিলাম। চিত্রনাট্যে অনেকগুলো দার্শনিক সংলাপ রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ জীবনটাকে যেমন করে ভাবেন, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন নাটকের চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে। প্রতিটি পর্বের শেষে তিনি দুইটি কথা বলে গেছেন, শুনতে যেয়ে কখনও বাদ দিইনি। কথা দুইটি যেন আমারই জন্য লেখা।
‘আশা ও আনন্দের যে অপরূপ দিন
তার উল্টো পিঠেই দুঃখ ও বেদনার
দীর্ঘ রজনী।
আশা-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা
নিয়েই আমাদের এইসব দিনরাত্রি’
সম্পাদনার কাজটাও ভালো হয়েছে। অনেক কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। গল্পটা বেশ ভালোভাবে সম্পাদক তুলে এনেছেন। তাৎক্ষণিক সম্পাদনায় ছিলেন মীর আহমদ হোসেন। ভিটিআর. সম্পাদনায় ছিলেন হারুনুর উর রশিদ। অনেক আগের নাটক, সে জন্য হয়ত সাব-টাইটেল ছিল না। তবে থাকলে মন্দ হত না।
সংগীত ও আবহসংগীত খুবই মনোমুগ্ধকর ছিল। সাংস্কৃতিক একটি পরিমণ্ডলে নির্মাণ করা নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’। শাহানা, রফিক ও নিলু ভাবি, এরা প্রত্যেকে গান করতে ভালোবাসেন। মাঝেমধ্যে ছাদে গানের আসর বসত। সুযোগ পেলে বাবা মেহফুজুল হকও অংশগ্রহণ করতেন। নাটকটির নেপথ্য সংগীতে ছিলেন মো. রেজওয়ান চৌধুরী। পরিচিত সংগীত ও আবহসংগীত পরিচালনায় ছিলেন জালাল আহমেদ।
নাটকে শব্দগ্রহণও বেশ মধুর ছিল, এতকুটু যান্ত্রিকতা ছিল না। প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো ধারণের সাথে প্রাকৃতিক যে আবহ তা সুন্দরভাবে নাটকে সংযুক্ত করা হয়েছে। শব্দগ্রহণে ছিলেন আব্দুল হালিম ও আব্দুর রহিম। শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন এইচ ফ্রান্সিস, ফয়েজুল ইসলাম ও সালাহউদ্দিন।
নাটকে ভারী কোনো রূপসজ্জা ছিল না। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের যে পরিবেশ, তা টিকিয়ে রাখতে এবং ফুটিয়ে তুলতে হালকা রূপসজ্জা ছিল। নেপথ্যে রূপসজ্জায় ছিলেন ফারুক, মুসলেম, উত্তম, দুলাল, শামসু, খালেক, বাসার ও মিল্টন।
‘এই সব দিন রাত্রি’ নাটকের চিত্রগ্রহণ ছিল বেশ নান্দনিক। সব প্রকার শটের ছোঁয়া ছিল। লং-মিড-ক্লোজ, আবার সেগুলোর উপশটও লক্ষ্য করা গেছে। চিত্রগ্রহণে ছিলেন সমীর কুশারী, নজরুল ইসলাম ও আ. রাজ্জাক তালুকদার। ক্যামেরা সহযোগী ছিলেন মোজাহের আলী, আবু হাশেম ও আবু তাহের। বহির্দৃশ্য ধারণে ছিলেন আবদুর কুদ্দুস এবং সহযোগীদের মধ্যে মো. ইসমাইল, আ. মতিন সরকার ও লুৎফর রহমান। চিত্রগ্রহণে সহকারী ছিলেন মোজহার আলী, আব্দুল হক, আবু হাশেম ও আবু তালেব। চিত্র ধারণে ছিলেন ফজলুর রহমান ও জসিম উদ্দিন আকন্দ। ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণে ছিলেন আবু হাশেম। বহির্দৃশ্য চিত্রায়ণে ছিলেন আনোয়ার হোসেন বুলু।
শিল্প নির্দেশনা কাজটিও বেশ ভালো হয়েছে। দৃশ্যসজ্জাও বেশ নান্দনিক। শিল্প নির্দেশক এমনভাবে ঘর নির্বাচন করেছেন, যেখানে শটগুলো বেশ অর্থবহ মনে হয়েছে। ঘরগুলোও স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী বেশ যায়। সুখী নীলগঞ্জ অবকাঠামো এবং মাস্টার সাহেবের ঘর বেশ শিল্পমণ্ডিত। শিল্প নির্দেশনা এমনভাবে করা হয়েছে, কোনো কিছু অতিরিক্ত মনে হয়নি। দৃশ্যের সাথে শিল্প নির্দেশকের সম্পর্ক খুবই গভীর মনে হোল। দৃশ্য পরিকল্পনা ও শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন এসএ কিউ মঈনউদ্দিন। দৃশ্যসজ্জায় ছিলেন নুরুল হক, ফজলুল হক, বিমল দাস, মুসলিম/হামিদ, আলাউদ্দিন, আব্দুল মোতালেব, ওয়াহিদুর রহমান ও কামরুল/মোক্তার।
‘এই সব দিন রাত্রি’ নাটকের রচয়িতা কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, এ্যানিমেশন চিত্রায়ণ ও পরিকল্পনায় যথাক্রমে ছিলেন মাযহারুল ইসলাম এবং এসএকিউ মঈনউদ্দিন, সংকলনে মাহবুবা ফেরদৌস, সর্বশেষ ‘এই সব দিন রাত্রি’ নাটকের প্রযোজক ও পরিচালক হলেন মোস্তাফিজুর রহমান।