কমরেড আহসান উল্ল্যাহ চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ২৬ জানুয়ারী চট্টগ্রামের মিরশরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জদার্ণপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তিনি পিতৃহারা হন। বাবার শাসন না থাকায় ছোটবেলায় তিনি বাউন্ডেলে এবং ডানপিঠে স্বভাবের ছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যুদ্ধ শেষে দুর্ভিক্ষ, রোগ শোকসহ নান কষ্ট আর দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সাথে তার পরিচয় শৈশব থেকেই। শিক্ষা জীবন শুরু তাদের পারিবারিক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত স্কুলে। ৫২ সালে ফেনীর ফুলগাজী থানার আলী আজম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ঢাকা বোর্ডের অধীনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াকালীন তাঁর স্মৃতিভ্রমরোগ হওয়ায় যথাসময়ে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী তিনি নৈশ পালায় ভর্তি হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এবং সিটি কলেজে ভর্তি হন।
তিনি স্কুলে পড়ার সময় রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ইউপিপির সহকারী সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি সিটি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পার্টির কারণে লেখাপড়া বেশীদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯৫৪ সালের শেষ দিকে তিনি বিমান বাহিনীর পাইলট ক্যাডেট হিসাবে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হলেও ব্যবহারিক পরীক্ষায় সফল হতে পারেন নি। পরবর্তী চট্টগ্রাম বন্দরে নিরাপত্তা বিভাগে সহকারী পরিদর্শক পদে চাকুরী পান। দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে পরে নিরাপত্তা বিভাগ থেকে তাঁকে সরিয়ে ট্রাফিক বহির্বিভাগে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তার প্রতিবাদী চরিত্রের কারণে চাকরি বেশীদিন স্থায়ী হয়নি।
আহসান উল্ল্যাহ চৌধুরী ১৯৫৮ সাল থেকে বাম রাজনীতির সাথে পরোক্ষভাবে যুক্ত হন। ১৯৬৬ সালের মাঝামাঝি কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সংগঠক, ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এবং ১৯৭০ সালের শেষ দিকে সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তী ৮০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ক্রন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ৮৬ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়ামের সদস্য মনোনীত হন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সম্মেলনে তিনি সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং চট্টগ্রাম জেলা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯০’র দশকে কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে বিলোপবাদীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন এবং পার্টিকে রক্ষা করেন।
তিনি ছিলেন আপোষহীন, সংগ্রামী ও বিপ্লবী জননেতা। অনেক লোভ-লালসা, ভয়ভীতি দেখিয়েও তাঁকে নিবৃত করা সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে তার উপর বিভিন্ন সময় নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন আর জেল জুলুম হুলিয়া।
১৯৬৫ সালে তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হন। আশির দশকে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা হয়। তৎকালীন সাম্রিক আদালত তাকে ১৭ বেত, দুই বছর জেল, পাঁ হাজার টাকা জরিমানা, সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং ব্যাঙ্কের হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী পার্টির সিদ্ধান্তে তিনি আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যান।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ মুক্তযুদ্ধের সময় তিনি এপ্রিল মাসে আগরতালায় চলে যান এবং ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর সংগঠক হসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তাকে বন্দরের মন্ত্রণায়ের দায়িত্ব নিতে বলা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
অনেকটা অভিমান নিয়েই ১৯৯৭ সালে তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসরে চলে যান। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে তার সন্তানদের তিনি বসবাস করছেন।
লেখক: সংগঠক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় কমিটি।