চট্টগ্রাম: করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পরও একজন পোশাক শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে বাধা দেয়ায় ভুক্তভোগী শ্রমিকের পক্ষ থেকে এইচবি নিটেক্স লিমিটেড নামের একটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) চট্টগ্রামের প্রথম শ্রম আদালতে এ মামলাটি করা হয়। (মামলা নম্বর- আইআর ০৯/২০২১)।
ওই শ্রমিকের নাম মোহাম্মদ ইদ্রিছ। তিনি চট্টগ্রাম সিটির সাগরিকা রোডের বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত এইচবি নিটেক্স লিমিটেডে সুপারভাইজার পদে গত ২০২০ সালের ২ নভেম্বর থেকে কর্মরত ছিলেন। তার মাসিক বেতন ছিল সর্বসাকুল্যে ২০ হাজার টাকা। প্রায়ই আট ঘন্টার অতিরিক্ত কাজ হলেও কোন ওভারটাইম ভাতা পান না।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ‘গত ২৫ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৮ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ ইদ্রিছ। চিকিৎসা শেষে তিনি ৭ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ২১ দিন আইসোলেশনে ছিলেন। তিনি ৩০ মে কাজে যোগ দিতে গেলে এইচবি নিটেক্স কর্তৃপক্ষ তাকে ফের করোনার পরীক্ষার সার্টিফিকেট জমা দিতে মোখিক নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে মোহাম্মদ ইদ্রিছ করোনা পরীক্ষার জন্য ৫ জুন নমুনা জমা দিয়ে ৮ জুন করোনার নেগেটিভ ফলাফল পান। কিন্তু ইদ্রিছ করোনা সার্টিফিকেটসহ কাজে যোগ দিতে গেলে তাকে কাজে যোগ দিতে এইচবি নিটেক্স কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অপারগতা প্রকাশ করেন। এভাবে তিনি কয়েক বার গিয়ে অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তাকে কাজে যোগদানের সুযোগ দেয়নি। শেষে নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী শ্রমিক বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টুর সহযোগিতায় কর্তৃপক্ষ বরাবর গ্রিভ্যান্স দরখাস্ত এবং চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহা পরিদর্শক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সাড়া পান নি। দীর্ঘ দুই মাস অপেক্ষার পর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২০১৩ মোতাবেক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহযোগিতায় চট্টগ্রাম শ্রম আদালতের এডভোকেট জানে আলমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রথম শ্রম আদালতে মামলা করেন।’
পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, ‘করোনা দুঃসময়ে শ্রমিকেরা খুব আর্থিক কষ্টে আছে। এ রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মালিক পক্ষের সহানুভূতিশীল আচরণ প্রত্যাশিত। কিন্তু করোনা আক্রান্ত শ্রমিক ইদ্রিছের প্রতি এইচবি নিটেক্স কর্তৃপক্ষের আচরণ বেআইনি, অনৈতিক ও অমানবিক। আমরা দুই মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু মালিক পক্ষ এবং সরকারী তদারকী প্রতিষ্ঠানের যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা আশা করব, শ্রম আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে যেন মামলার নিষ্পত্তি হয় এবং শ্রমিক যেন ন্যায় বিচার পায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সুদত্তোর দিতে পারেন নি এইচবি নিটেক্সের মানব সম্পদ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন।